
শরতের শুভ্রতাই মহিমান্বিত। লিখেছেন সুরবি প্রত্যয়ী,আকাশে নীলের আধিক্য আর সাদা মেঘের শুভ্রতাই বলে দিচ্ছে বর্ষারানীকে বিদায় দিয়ে শরৎ হাজির। ইট-কাঠের শহরের মাঝে এই নীল-সাদার খেলা কিন্তু বেশ উপভোগ করে শহুরের ব্যস্ত মানুষগুলো। প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী ঢাকার আশপাশের কাশবনগুলো জেগে উঠছে। প্রিয়জনের হাত ধরে ঘুরেই আসুন না হয়, নীল-সাদার হাতছানিকে সাক্ষী রেখে!
“শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি, ছড়িয়ে গেল
ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি।” এভাবেই বাঙালির সামনে শরতের সৌন্দর্য উপস্থাপন
করেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার মতোই শরতে মুগ্ধ বাংলার কবিকূল।
শরৎ
হচ্ছে চমৎকার মেঘের ঋতু, স্পষ্টতার ঋতু। কেননা শরতের আকাশ থাকে ঝকঝকে
পরিষ্কার। নীল আকাশের মাঝে টুকরো টুকরো সাদা মেঘ যেন ভেসে বেড়ায়। “গ্রামের
বধু যেমন মাটি লেপন করে নিজ গৃহকে নিপুণ করে তোলে, তেমনি শরৎকাল প্রকৃতিকে
সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়। বর্ষার পরে গাছগুলো সজীব হয়ে ওঠে। আকাশে হালকা
মেঘগুলো উড়ে উড়ে যায়।”
শরৎ মানেই নদীর
তীরে কাশফুল। শরৎ মানেই গাছে গাছে হাসনুহানা আর বিলে শাপলার সমারোহ। শরৎ
মানেই গাছে পাকা তাল। সেই তাল দিয়ে তৈরি পিঠা, পায়েস। আর ক্ষেতে ক্ষেতে আমন
ধানের বেড়ে ওঠা চারা। পানকৌড়িরা ডুবসাঁতার দেয় বিলের জলে, বক মাছ শিকারে
ধ্যানে মগ্ন। শরতের সকালটা খুব অন্য রকম মেঘ আর নীলের বিস্তৃত দিগন্ত দেখে
বোঝা যায় শরতের শুভ্রতা এসেছে প্রকৃতির মাঝে। ভোরে ঘাসের ওপর দিয়ে খালি
পায়ে চলতে গিয়ে শিশিরের স্পর্শে শিহরিত মন। কাশবনে পড়ন্ত বিকাল নতুন
অনুভূতি। শরতের মৃদু বাতাসে স্নিগ্ধ রোদ দিঘির জলে চিকচিক করছে।
কিন্তু
সময়ের বিবর্তনে গ্রামে-গঞ্জে কাশফুলের আধিক্য কমে গেছে। আমরা মানুষরা শুধু
লোভীর মতো প্রকৃতির কাছ থেকে খাদ্য চাই। কিন্তু প্রকৃতিকে টিকিয়ে রাখার
জন্য কিছুই করিনা। যেমনঃ আগে প্রায় প্রতিটি গ্রামে বটগাছ দেখা গেলেও এখন
তেমনটা চোখে পড়ে না। মানুষ নিজের প্রয়োজনে সেগুলো কেটে ফেলছে। অথচ আগে এই
বটগাছকে কেন্দ্র করে কত উৎসব হয়েছে। বটগাছের ছায়ায় মানুষ বিশ্রাম নিয়েছে।
আশ্রয় নিয়েছে কত রকম পাখি আর পোকামাকড়। কিন্তু এখন আর সেসব নেই।